Navy Army Military 1 Military 2 Military 3 Military 4 Military 5 Military 6 Military 7 Civilian 1 Civilian 2 Civilian 3 Civilian 4 Civilian 5 Civilian 6 Civilian 7 Civilian 8 Civilian 9 Civilian 10 Civilian 11 Civilian 12 Civilian 13 Civilian 14 Civilian 15 Civilian 16 Civilian 17 Civilian 18 Civilian 19 Civilian 20 Civilian 21 Civilian 22

সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় অনবদ্য বাংলাদেশ, ব্যতিক্রম সশস্ত্র বাহিনী

বাংলাদেশের আদালত, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে, যেমনটা দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ বিরল। কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী এখনও রয়ে গেছে নাগালের বাইরে।

Read the Article in English

র্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য বাংলাদেশের সরকারি ও পেশাগত অঙ্গনে প্রবেশের দুয়ার প্রায় অবারিত।

জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনী — রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সকল দপ্তরে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ রয়েছে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের। জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী হিসেবে তারা মামলা পরিচালনা যেমন করছেন, তেমনি বিচারক হিসেবে পালন করছেন ন্যায়বিচার নিশ্চিতের গুরুদায়িত্বও। দেশের শীর্ষ সব বিদ্যাপীঠে অধ্যাপনা করছেন অনেকে। গণমাধ্যমেও সাংবাদিক হিসেবে রাখছেন জনমত তৈরিতে ভূমিকা।

বেসামরিক এমন বহু খাত ও প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের উপস্থিতির হার দেশের মোট জনসংখ্যায় তাদের নয় শতাংশ অনুপাতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ — এমনকি কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা বেশিও। বাংলাদেশের জনপরিসরে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নেত্র নিউজের করা একটি বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

নজিরবিহীন এই গবেষণার ফলাফল “এই অঞ্চলে, বিশেষ করে ভারতে, বিদ্যমান চিরাচরিত বিভিন্ন ধ্যানধারণাকে” প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে গবেষণা রয়েছে টিআইবির। নেত্র নিউজের সর্বশেষ বিশ্লেষণের ফলাফলও পর্যালোচনা করেছে সংস্থাটি।

“আমাদের আকাঙ্ক্ষার জায়গা আরও অনেক বেশি, বিশেষ করে জ্যেষ্ঠতর পর্যায়ে,” বলেন ইফতেখারুজ্জামান, তবে “সরকারি খাতের চাকরির সুযোগ-সুবিধায় বিভিন্ন জাতি-সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রশ্নে বাংলাদেশ স্পষ্টতই প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো করেছে।”

কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটির অসামান্য অগ্রযাত্রা হোঁচট খেয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর দোরগোড়ায়।

নেত্র নিউজের হাতে আসা বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীতে সক্রিয় কর্মকর্তাদের অতি-গোপনীয় দুইটি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নৌবাহিনীর কমিশন্ড কর্মকর্তাদের মধ্যে সংখ্যালঘুদের হার এক শতাংশের সামান্য বেশি। আর সেনাবাহিনীতে এক শতাংশেরও কম

প্রশাসন, পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পর্যায়ের এসব চাকরি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।

এসব পদের জন্য পরীক্ষার্থীদের মধ্যে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিকভাবেও এসব বিষয় অত্যন্ত সংবেদনশীল। সিভিল সার্ভিস ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা পদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের প্রতি হওয়া বৈষম্যকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সরকারি চাকরিতে বিশেষ কোটা ব্যবস্থা থাকার জেরে সৃষ্ট আন্দোলনে গত বছর পতন ঘটে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের।

তবে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচকদের কারও কারও দাবি ছিল, দলটির আমলে প্রশাসন ও পুলিশের উচ্চতর পদে ব্যাপক আকারে হিন্দু কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হতো। নেত্র নিউজের বিশ্লেষণে ইঙ্গিত মিলছে যে এই ধরণের দাবি অনেকটাই অতিরঞ্জিত। বরং, বাংলাদেশে যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক কোনো গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য বা পক্ষপাত করা হয়ে থাকে, তার সব ধরণের লক্ষণ উপস্থিত সামরিক বাহিনীতে, যেখানে অমুসলিম কর্মকর্তাদের উপস্থিতি একেবারেই নগন্য।

পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর অতি-গোপনীয় তালিকা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্মুক্ত তালিকা যাচাই বাছাই সম্পূর্ণ মেথডোলজি পড়ুন করে নেত্র নিউজ এসব অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে প্রচলিত ও মেশিন লার্নিং পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ৫০,০০০ কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় নির্ণয় করা হয়েছে।


ইসলাম ধর্মের আইকন হিন্দু ধর্মের আইকন খ্রিস্টান ধর্মের আইকন বৌদ্ধ ধর্মের আইকন

সংখ্যালঘুদের অগ্রযাত্রা

নেত্র নিউজের বিশ্লেষণে বাংলাদেশে — বিশেষ করে দেশটির বেসামরিক খাতে — সংখ্যালঘুদের উজ্জ্বল পদচারণা দেখা গেছে। দেশটিতে প্রায় দেড় কোটি সংখ্যালঘুর বাস, যা মোট জনসংখ্যার নয় শতাংশ। এদের মধ্যে অগ্রভাগে রয়েছেন বাঙালি হিন্দুরা, তার পরেই আছেন আদিবাসী, বাঙালি খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

নেত্র নিউজের বিশ্লেষণে দেখা যায়, জনপ্রশাসনে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের হার ১০.৫ শতাংশের বেশি, অধস্তন আদালতে ১০ শতাংশ ও পুলিশে নয় শতাংশ। (হাসিনার আমলে ২০২২ সালের একটি তালিকা অনুযায়ী জনপ্রশাসনে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের হার খানিকটা কম; ১০ শতাংশের মতো।)

সংখ্যালঘুদের এই আনুপাতিক অংশগ্রহণ শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষকদের মধ্যে সংখ্যালঘুদের হার ১০ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ, নিয়োগে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না এমন প্রতিষ্ঠানেও জায়গা পেয়েছেন সংখ্যালঘুরা।

এর বাইরে পেশাজীবি সংগঠনগুলোতেও আছে তাদের কমবেশি আনুপাতিক উপস্থিতি। যেমন, দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের আট শতাংশ ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ৮.৫৭ শতাংশ হলেন সংখ্যালঘু।

জনসংখ্যা ছাড়াও বিভিন্ন মেধাতালিকার সঙ্গেও এই পরিসংখ্যানের সঙ্গতি রয়েছে।

যেমন, ঢাকা বিভাগে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাবৃত্তি পাওয়া ৩,২৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সংখ্যালঘুদের হার ৯.৬০ শতাংশ। এইচএসসি পরীক্ষার গ্রেডিং প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয় — ফলে পরীক্ষকের পক্ষপাত সেখানে প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, দেশের বেসামরিক সরকারি পদ ও প্রভাবশালী পেশায় সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক ও মেধাভিত্তিক অংশগ্রহণে তারতম্য বেশ কম।


ইসলাম ধর্মের আইকন হিন্দু ধর্মের আইকন খ্রিস্টান ধর্মের আইকন বৌদ্ধ ধর্মের আইকন

সামগ্রিক জনসংখ্যার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কতটা তুলনীয়, তা সহজে বোঝার জন্য আমরা একটি চার্ট তৈরি করেছি। এই চার্টের বাম দিকে দেখা যাবে জনসংখ্যায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর অবস্থান। ডান দিকে দেখানো হয়েছে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্যে তাদের অনুপাত। ব্যবধান ভালো করে বুঝতে প্রতিটি গোষ্ঠীর শতকরা হারকে ৫০ দিয়ে গুন করে ডটের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জনসংখ্যার হার

icon

ইসলাম ধর্মের আইকন হিন্দু ধর্মের আইকন খ্রিস্টান ধর্মের আইকন বৌদ্ধ ধর্মের আইকন

দক্ষিণ এশিয়ার বেহাল মানদণ্ডে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তির দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে সামগ্রিক অনেক সূচকেই ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

সামরিক বাহিনীতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ অনেকটা ভারতের মতোই। ২০১২ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ভারতে বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী মুসলমান সম্প্রদায় থেকে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার কোরের সদস্য আছেন মাত্র দুই শতাংশ, যদিও তারা জাতীয় জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ।

অর্থাৎ ওই হিসাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তুলনায় বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীতে এক্ষেত্রে খুব একটা বৈসাদৃশ্য নেই।

কিন্তু বেসামরিক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি স্পষ্টভাবেই ধরা পড়ে।

বাংলাদেশের প্রশাসনে সংখ্যালঘুদের হার ১০.৫ শতাংশের মতো। আর দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায় থেকে আসা কর্মকর্তাদের (আদিবাসী ব্যতীত ত্রিপুরা সহ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় হিন্দু ধর্মের অনুসারী। তাদেরকে আদিবাসী হিসেবে ধরা হয়েছে। ) হার প্রায় নয় শতাংশের মতো। অর্থাৎ, জনসংখ্যার অনুপাতে বেসামরিক প্রশাসনে হিন্দুদের অংশগ্রহণ ১১২% শতাংশ।

অপরদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে দেশটির প্রধান সংখ্যালঘু গোষ্ঠী মুসলমানদের অংশগ্রহণ মাত্র চার শতাংশ। অর্থাৎ, সেখানে জনসংখ্যার অনুপাতে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বের হার ২৮ শতাংশ।

পুলিশেও একই চিত্র। বাংলাদেশে পুলিশে হিন্দু কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বের হার স্ব জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ, আর ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশ সার্ভিসে মুসলমান কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বের ভাগ মাত্র ৩০ শতাংশ।

অর্থাৎ জনসংখ্যার অনুপাত সমন্বয় করে নিলে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস ও পুলিশে কর্মকর্তা পর্যায়ে হিন্দুদের অংশগ্রহণ ভারতে মুসলমানদের অংশগ্রহণের তিন থেকে চার গুণ

স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের তুলনায় যোজন যোজন ব্যবধানে পিছিয়ে আছে ভারত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষকদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ভারতের সবচেয়ে খ্যাতিমান দুই পাবলিক বিদ্যাপীঠ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের টেনিউর শুরু হয় সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে। তাই তুলনাটাও সেই পর্যায়ে করা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও তদুর্ধ্ব পদের শিক্ষকদের মধ্যে ৮.৮ শতাংশ এসেছেন দেশের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিন্দুদের মধ্য থেকে। অপরদিকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে মুসলিমদের হার মাত্র ৩.৮ শতাংশ আর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) ৬.৪ শতাংশ।

অর্থাৎ জনসংখ্যা সমন্বয় করলে, নিজ নিজ দেশের দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে শিক্ষকতায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ৪.৩ গুণ ও জেএনইউয়ের চেয়ে ২.৭৫ গুণ এগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের উত্তরের প্রতিবেশী নেপালের ক্ষমতাবলয়ে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন। সরকারি জনমিতি অনুযায়ী, নেপালের জনসংখ্যার ৮১ শতাংশ হিন্দু; কিন্তু সিভিল সার্ভিসে তারা ৯০ শতাংশেরও বেশি পদে অধিষ্ঠিত।

নেপালের শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী টেক বাহাদুর দং-এর ২০১৬ সালের এক গবেষণা অনুসারে, নেপালের মুসলিম সংখ্যালঘুরা জনসংখ্যার চার শতাংশেরও বেশি হলেও সিভিল সার্ভিস পদের মাত্র শূন্য দশমিক এক শতাংশ। নেওয়ার সম্প্রদায়ের বাইরে আদিবাসী বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ “বাকি বর্ণভুক্ত গোষ্ঠীগুলো মূলত হিন্দু, তবে সবাই নয়। যেমন, নেওয়ার সম্প্রদায়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয়ই আছে,” যোগ করেন ডং। “অপরদিকে নেওয়ার নয় এমন জনজাতিরা বৌদ্ধ, কিরান্ত, ইসলাম ও খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন ধর্ম পালন করে। তবে বেশিরভাগ অ-নেওয়ার জনজাতি হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। দলিতরা ছিলেন বেশি হিন্দু, তবে এখন অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।” গোষ্ঠীগুলো, যারা নেপালের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশেরও বেশি, তাদের অংশগ্রহণ মাত্র ১.৬ শতাংশ। বিপরীতে — জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও উচ্চবর্ণের “বাহুন আর ছেত্রিরা হলো বর্ণ হিন্দু; তারা কোনো নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়,” নেত্র নিউজকে জানিয়েছেন টেক বাহাদুর ডং। ব্রাহ্মণ বাহুন সম্প্রদায় সিভিল সার্ভিসের ৭০ শতাংশেরও বেশি পদে অধিষ্ঠিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে সিভিল সার্ভিসে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত পাকিস্তান, ভুটান ও ভারতের মতো প্রতিবেশীদের ছাপিয়ে গেলেও উচিত সম্মানটা খুব একটা জোটে না। “বাংলাদেশের সাফল্য,” তিনি বলেন, “আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক—দুই ক্ষেত্রেই প্রায় অদৃশ্য রয়ে যায়।”

তিনি যোগ করেন, দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বিশ্বের মনোযোগ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবরে আটকে থাকে; ধীরগতির ইতিবাচক অগ্রগতি তাতে জায়গা পায় না। “সংখ্যালঘুদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার মতো ইতিবাচক অগ্রগতি সেই গল্পের সঙ্গে খাপ খায় না,” বলেন তিনি।

এছাড়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাতি বা বর্ণই এই ধরণের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভাজনরেখা মূলত ধর্ম। “এই অমিলই,” কবিরের পর্যবেক্ষণ, “বিশ্বব্যাপী সংখ্যালঘু–অধিকার আলোচনায় বাংলাদেশের অগ্রগতির স্বীকৃতি পাওয়াকে আরও কঠিন করে তোলে।”


ইসলাম ধর্মের আইকন হিন্দু ধর্মের আইকন খ্রিস্টান ধর্মের আইকন বৌদ্ধ ধর্মের আইকন

পদ যত উপরের, কম তত বৈচিত্র্য

কিন্তু এর মানে এই নয় যে বেসামরিক সরকারের সকল পর্যায়ে বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ সমভাবে নিশ্চিত করতে পেরেছে। বরং, উপরের পদগুলোতে সংখ্যালঘুদের পদচারণা স্মিত হতে থাকে।

অমুসলিম প্রতিনিধিত্ব: সামগ্রিক বনাম শীর্ষ পদ
সামগ্রিক
শীর্ষস্তরের পদ
সূত্র: নেত্র নিউজের সংগ্রহ করা উন্মুক্ত ও গোপন সরকারি রেকর্ড ও উপাত্ত। সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গবেষণা পদ্ধতি অংশে দেখুন

দ্রষ্টব্য: সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে ব্রিগেডিয়ার ও তদূর্ধ্ব; নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে কমোডর ও তদূর্ধ্ব; প্রশাসনের ক্ষেত্রে সচিব ও তদূর্ধ্ব; পুলিশের ক্ষেত্রে ডিআইজি ও তদূর্ধ্ব; বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে জেলা-দায়রা জজ ও তদূর্ধ্ব; এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অধ্যাপক পদগুলোকে শীর্ষ পদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

বিচারিক আদালতের সর্বোচ্চ পদ জেলা জজ ও তদুর্ধ্ব পদে প্রায় ৯৬ শতাংশ মুসলিম, যদিও নিম্ন আদালতে বিচারকদের মধ্যে মুসলমানদের সামগ্রিক হার ৯০ শতাংশের কম।

বেসামরিক প্রশাসনে এই ব্যবধান আরও তীব্র: ৭৪ জন শীর্ষ-স্তরের সচিবের মধ্যে মাত্র একজন অমুসলিম। পুলিশে নেতৃত্বের পদগুলোতেও একই প্রবণতার প্রতিফলন দেখা যায়। ৮১ জন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল বা তার চেয়ে উচ্চতর পদে মাত্র পাঁচ জন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নাগরিক রয়েছেন।

আর সশস্ত্র বাহিনীর দিকে তাকালে এই ব্যবধান বেড়ে আকাশ-পাতাল বিভাজনে পরিণত হয়।

২০১৬ ২০১৬ সালের রেকর্ড সাম্প্রতিক না হলেও, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়োগ বা পদোন্নতিতে দৃশ্যমান ব্যবধান দূর করবে, এমন কোনো পদক্ষেপ বাহিনীগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেয়নি। আরও জানতে পুরো মেথডোলজি পড়ুন। সালের সেনাবাহিনীর তালিকায় সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অমুসলিম কর্মকর্তা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, যিনি ইতিমধ্যেই অবসর গ্রহণ করেছেন। ২০১৭ সালের নৌবাহিনীর তালিকায় আছেন কেবলমাত্র একজন অমুসলিম কমোডোর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চতুর্থ সর্বোচ্চ র‍্যাংক হলো কমোডোর, যা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও বেসামরিক প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিবের সমমানের। । তিনিও অবসরে গেছেন।

এই দুই কর্মকর্তার বাইরে দুই বাহিনীর চতুর্থ শীর্ষ পদ ও তদূর্ধ্ব পদগুলোতে ৩৫৭ জন মুসলিম কর্মকর্তা ছিলেন। অর্থাৎ, শীর্ষে থাকা প্রতি অমুসলিম কর্মকর্তার বিপরীতে ১৭৫ জনেরও বেশি মুসলিম কর্মকর্তা আছেন সশস্ত্র বাহিনীতে। অথচ, বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা অনুসারে প্রতি ১২ জন নাগরিকের মধ্যে একজন অমুসলিম।

এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যেও একইরকম বিভাজন দৃশ্যমান।

নেত্র নিউজের বিশ্লেষণ করা তথ্য অনুসারে, নৌবাহিনীর অফিসার কোরে কোনো আদিবাসী নেই। খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় থেকে আছেন যথাক্রমে এক ও তিন জন করে। সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে কোনো খ্রিস্টান নেই। আদিবাসী ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় থেকে আছে মাত্র সাত জন করে।


ইসলাম ধর্মের আইকন হিন্দু ধর্মের আইকন খ্রিস্টান ধর্মের আইকন বৌদ্ধ ধর্মের আইকন

সংখ্যালঘু হওয়াই অযোগ্যতা?

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সমস্ত শাখায় ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড (আইএসএসবি)-এর তত্ত্বাবধানে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আইএসএসবি নামটিই এসেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে; নিয়োগ প্রক্রিয়াও রয়েছে মিল। আর এই ব্যবস্থার ফলাফলেও রয়েছে সাদৃশ্য।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় দশক পর সবে ২০০৫ সালে এসে দেশটির সেনাবাহিনীতে সর্বপ্রথম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। পরের বছর দেশটির প্রথম হিন্দু সেনা কর্মকর্তা নিয়োগ পান।

বাংলাদেশে বেসামরিক চাকরিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকলেও, সামরিক বাহিনীতে তেমন কিছু নেই। অর্থাৎ কাগজে কলমে সশস্ত্র বাহিনীর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক। অথচ, বাস্তবে সেখানে সংখ্যালঘুরা বাদ পড়ে যান।

নামে মেধাভিত্তিক হলেও সামরিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে পক্ষপাত করার সুযোগ।

বেসামরিক নিয়োগের পরীক্ষা হয় সুস্পষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে (যেমন, নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নমালা, লিখিত পরীক্ষা), যেখানে গ্রেডিং করার ক্ষেত্রে পরীক্ষকের পক্ষপাতের সুযোগ কম। আবার পরীক্ষক জানতে পারেন না পরীক্ষার্থীর নাম-পরিচয়। ফলে, একেবারে সাক্ষাৎকারের মতো চূড়ান্ত পর্যায়ের আগে পরীক্ষক বা সাক্ষাৎকার বোর্ডের সদস্যদের বৈষম্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই বললেই চলে।

বিপরীতে আইএসএসবি নিয়োগের পদে পদে রয়েছে ব্যাক্তি-নির্ভর মূল্যায়ন। পরীক্ষার্থীদের মনস্তত্ব, ব্যাক্তিত্ব, পারিবারিক পরিচয় সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়োগে আমলে নেয়া হয়। একজন সাবেক আইএসএসবি কর্মকর্তা বলেছেন, ধর্মীয় পরিচয়ও মূল্যায়নের বাইরে থাকে না। এই কারণে মূল্যায়নের প্রায় প্রতিটি ধাপেই পরীক্ষকদের ব্যাক্তিগত বায়াস বা পক্ষপাতের প্রভাব পড়ার সুযোগ রয়ে যায়।

যদিও প্রত্যক্ষ বৈষম্যের প্রমাণ পাওয়া কঠিন, তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘু কর্মকর্তাদের বাইরে রাখার এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে, বিষয়টি মোটেই কাকতালীয় কিছু নয়। “দক্ষিণ এশিয়ার একটি সংখ্যাগুরুবাদী মানসিকতা হলো “অপরে”র প্রতি অনাস্থা, অবিশ্বাস। আর সেই মানসিকতা থেকে জন্ম নেওয়া সচেতন নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন” হতে পারে এই পরিস্থিতি।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এই প্রতিবেদনের বিষয়ে নেত্র নিউজের বিস্তারিত প্রশ্নমালার জবাব দেয়নি।

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলতে নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর বারোজন অবসরপ্রাপ্ত সংখ্যালঘু কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে নেত্র নিউজ। যাদের মধ্যে কেবল দুই জন নাম-পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হয়েছেন। অবসর গ্রহণের পরও সামরিক কর্মকর্তারা সশস্ত্র বাহিনীর নানা শৃঙ্খলা-শর্তে আবদ্ধ থাকেন, যার মধ্যে আছে আজীবন প্রাপ্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও পেনশনের মতো বিষয়ও। সমালোচনার কারণে লোভনীয় অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া, বিভিন্ন স্থানে প্রবেশাধিকার হারানোসহ সাবেক কর্মকর্তারা বিভিন্ন মাত্রার পরিণতি ভোগ করতে পারেন।

নেত্র নিউজের সঙ্গে কথা বলতে সম্মত হয়েছেন এমন গুটি কয়েক কর্মকর্তার একজন হলেন শচীন কর্মকার। তিনি সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন ক্যাপ্টেন ও মুক্তিযোদ্ধা। সংখ্যালঘু ইস্যুতে সরব শচীন কর্মকারের নাম অবশ্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একটি সংগঠনের সদস্যদের তালিকায় নেই

নেত্র নিউজের বিশ্লেষণের ফলাফল সম্পর্কে আগেই অবহিত না করে, তাকে সামরিক বাহিনীতে অমুসলিম কর্মকর্তাদের হার অনুমান করতে বলা হলে, কর্মকার প্রায় নিখুঁত উত্তর দিয়েছিলেন— “নেগলিজেবল ... এটা কোনো পার্সেন্টেজেই পড়ে না।”

টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশির দশকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটও বর্ণনা করেন তিনি। তিনি জানান, বছরের পর বছর, প্রত্যেকবার বিদেশ ভ্রমণের জন্য তার সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। সে সময় “নিজেকে ক্লাসিফায়েড কয়েদির মতো মনে হতো,” বলেন কর্মকার।

সেনাবাহিনীতে তার নিজের অভিজ্ঞতা যে সুখকর নয়, তা স্পষ্ট। কিন্তু তার ভাষ্য, সমসাময়িক সংখ্যালঘু অফিসারদের অভিজ্ঞতা খুব ভিন্ন কিছু নয়।

সামরিক বাহিনীতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে রাখাটা, তার মতে, “একটি অলিখিত রাষ্ট্রীয় আইন।”

“সংখ্যালঘু কমিউনিটিকে বিশ্বাস করে না — এ বিষয়ে কোনো ডাউট নাই,” যোগ করেন তিনি।

আবার বিপরীত বক্তব্যও আছে।

আরেক মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মনীষ দেওয়ান তাদের একজন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত চাকমা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই কর্মকর্তা বিস্তারিত সাক্ষাৎকার না দিলেও, শুধু বলেছেন, “আমি নিজেকে একজন সংখ্যালঘু হিসেবে মনে করি না। আমি একজন গর্বিত সেনা, যে তার রক্ত ও ঘাম দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। আমার বড় পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশি।” ●

সুরাইয়া সুলতানামার্জিয়া হাশমি মুমু প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন। সুবিনয় মুস্তফী ইরনআকিব মো সাতিল চিত্রাঙ্কন করেছেন। মিরাজ হোসেন, মেহেদী হাসান মারুফ, সুবিনয় মুস্তফী ইরন, আকিব মো সাতিল ও সুরাইয়া সুলতানা গবেষণায় সহায়তা করেছেন।


ইসলাম ধর্মের আইকন হিন্দু ধর্মের আইকন খ্রিস্টান ধর্মের আইকন বৌদ্ধ ধর্মের আইকন

নেত্র নিউজ যেভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে

নেত্র নিউজ ২০১৬-১৭ সালের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশের গোপনীয় রেকর্ড সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করেছে। এসব রেকর্ডে হাজার হাজার কর্মকর্তাদের তালিকা, তাদের পদমর্যাদা, যোগদানের তারিখ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ ছিল। এসব রেকর্ড সাম্প্রতিক না হলেও, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়োগ বা পদোন্নতিতে দৃশ্যমান ব্যবধান দূর করবে, এমন কোনো পদক্ষেপ বাহিনীগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেয়নি। যেহেতু এসব তালিকা নিরাপত্তা বাহিনী সংক্রান্ত ও অতি-গোপনীয়, সেহেতু নেত্র নিউজ তা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছে।

এর বাইরে উন্মুক্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে নিচের সূত্রগুলো থেকে:

  • গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে gems.gov.bd থেকে। হাসিনা আমলের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পুরোনো ওয়েবসাইট থেকে, যার আর্কাইভ সংস্করণ দেখা যাবে এখানে
  • বিচারিক আদালতের বিচারকদের তালিকা দেশজুড়ে কয়েকশ’ আদালতের ওয়েবসাইটে থাকা তালিকা থেকে সংগ্রহ করে ডুপ্লিকেট সরানো হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ: নোয়াখালী জেলার একটি আদালতের বিচারকদের তালিকা মিলবে এখানে
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখান থেকে অস্থায়ী শিক্ষকদের বাদ দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ: নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের তালিকা পাওয়া যাবে এখানে
  • সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের উন্মুক্ত তালিকা পাওয়া যাবে এখানে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির উন্মুক্ত সদস্য তালিকা আছে এখানে
  • ভারতের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস-এর কর্মকর্তাদের তালিকা নেওয়া হয়েছে easy.nic.in-থেকে। আর পুলিশ সার্ভিসের কর্মকর্তাদের তালিকা আছে ips.gov.in-এ।
  • দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তালিকা নেওয়া হয়েছে প্রত্যেক বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে। উদাহরণস্বরুপ: আইন বিভাগের ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে এখানে। আর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষকদের তালিকা আছে এখানে

আমরা স্ক্যান করা পিডিএফ ফাইল থেকে স্প্রেডশিটে উপাত্ত নামাতে গুগল পিনপয়েন্ট ও ট্যাবুলা ব্যবহার করেছি। এরপর স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নাম ও অন্যান্য বিবরণে বানান ত্রুটি সহ ভুল সংশোধন করেছি।

কিছু তালিকা কেবল ইংরেজিতে ছিলো। আমরা ওপেন এআই-এর এপিআই ও গুগল ট্রান্সলেট এপিআই ব্যবহার করে সেগুলো বাংলায় রূপান্তর করেছি, যার মধ্যে কিছু নামের বানান ম্যানুয়ালি সংশোধন করা হয়।

আমরা উইকিপিডিয়া থেকে বাঙালি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রচলিত বিভিন্ন উপাধির পাঁচটি তালিকা সংগ্রহ করেছি (যেমন: বাংলা উইকিপিডিয়ায়: বাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহ ) এবং বাকিগুলো নিজেরাই যুক্ত করেছি। এরপর আমরা গুগল স্প্রেডশিটে নামের উপাধির উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ধর্ম নির্ধারণের জন্য নিচের ফর্মুলা ব্যবহার করেছি:

=ARRAYFORMULA(TEXTJOIN(", ", TRUE, IF(LEN(A2), IFERROR(VLOOKUP(FILTER(SPLIT(A2, " "), SPLIT(A2, " ") <> ""), 'Sheet with surnames'!A:B, 2, FALSE), ""), "")))

এখানে “Sheet with surnames”-এ A কলামে ধর্মীয় পরিচয়সূচক পারিবারিক উপাধি ও নামের তালিকা রয়েছে, B কলামে আছে তাদের সম্ভাব্য ধর্ম। উপরের ফর্মুলা ওই তালিকায় থাকা নামের সঙ্গে মূল তালিকার কোনো নামের মিল পেলে, B কলামে থাকা সম্ভাব্য ধর্মীয় পরিচয় প্রদর্শন করে।

ধরা যাক, কর্মকর্তাদের মূল তালিকায় A2-তে রয়েছে “মৃণাল কান্তি দাস”। তাহলে এই ফর্মুলা স্প্রেডশিটের কোথাও দেয়া হলে, এটি প্রথমে এই নামকে তিনটি অংশে ভাগ করবে: “মৃণাল”, “কান্তি” এবং “দাস”। এরপর এই প্রতিটি অংশকে “Sheet with surnames” নামে আরেক শিটে থাকা তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে। যেহেতু “কান্তি” ও “দাস” উভয়ই ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু নাম হিসেবে বিবেচিত, তাই উপরের সূত্রটি “হিন্দু , হিন্দু” প্রদর্শন করবে। কমপক্ষে দুটি মিল থাকা ওই রায় আমরা চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করে নিয়েছি। কিন্তু শুধু একটি কিংবা অমিল উপাধির ক্ষেত্রে আমরা ম্যানুয়ালি যাচাই করেছি। কিছু উপাধি মুসলিম, হিন্দু কিংবা এমনকি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও প্রচলিত, যেমন চৌধুরী ও দেওয়ান। সেসব ক্ষেত্রে আমরা ব্যক্তির প্রথম বা মধ্যম নাম ও ক্ষেত্রেবিশেষে তাদের পিতামাতার নাম মিলিয়ে দেখে সম্ভাব্য ধর্ম নির্ধারণ করেছি।

ধর্মীয় পরিচয়বাহী সহস্রাধিক পারিবারিক নাম/উপাধি ও প্রথম নামের তালিকাটি এখানে পাওয়া যাবে।

আমাদের হিসাবে আদিবাসী কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাস্তবের চেয়ে কম গণনা করা হয়ে থাকতে পারে, কারণ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় নিজেদের নামকরণের জন্য খ্রিস্টান ও হিন্দু রীতিনীতি অনুসরণ করে। ওই ধরণের কিছু নাম হয়তো খ্রিস্টান বা হিন্দু হিসেবে গণনা হয়েছে।

বাংলাদেশের ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১.১ শতাংশ আদিবাসী রয়েছে। আমরা অনুমান করেছি যে তাদের ৬০ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ২০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও ১৫ শতাংশ খ্রিস্টধর্মাবলম্বী। সেই অনুযায়ী, জনসংখ্যায় ধর্ম-নির্বিশেষে আদিবাসীদের হার খুঁজে বের করার জন্য, আমরা জাতীয় জনসংখ্যা থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সংখ্যা ওই অনুপাতে কম হিসাব করেছি।

যেহেতু ভারতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস, সেহেতু আইএএস ও আইপিএস কর্মকর্তাদের নাম থেকে সম্ভাব্য ধর্ম বের করতে, আমরা দুটি মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক পাইথন লাইব্রেরি ব্যবহার করেছি। এদের একটি “It is all in the name” ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় শিকাগো ও সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি করেছেন। অপরটি হলো “pranaam”, যা ৪০ লক্ষ ভারতীয় নাম সমেত ভূমি মালিকানা রেকর্ডের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এই দুইটি মডেলই ভারতীয় নাম থেকে সম্ভাব্য ধর্ম অনুমান করতে পারে। পিয়ার রিভিউড গবেষণাপত্রে প্রত্যেকটি লাইব্রেরির উচ্চ নির্ভুলতার হার দেখা গেছে।

প্রায় ৯৭ শতাংশ নামের ক্ষেত্রে উভয় মডেল একই রায় দিয়েছে, যদিও তাদের বিচারপদ্ধতি আলাদা। বাকি ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে আমরা ওপেনএআই-এর এপিআই ব্যবহার করে সম্ভাব্য ধর্ম নির্ধারণ করেছি। এই গবেষণার উদ্দেশ্যে মোট প্রায় ১০,০০০ ভারতীয় কর্মকর্তা ও শিক্ষকের সম্ভাব্য ধর্ম শনাক্ত করেছি।

বিস্তারিত পাইথন নোটবুক পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে

প্রতিবেদনের দ্বিতীয় চার্টের ক্ষেত্রে ভারতের অংশে শুধু হিন্দু-মুসলমান নয়, সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সম্ভাব্য ধর্ম বের করা হয়েছে শুধুমাত্র pranaam লাইব্রেরি ব্যবহার করে, কেননা It is all in the name দিয়ে তা করা যায় না। ফলে, এক্ষেত্রে আগের বিশ্লেষণের সঙ্গে শতকরা হারের ফলাফলে কিছুটা তারতম্য রয়েছে।